আত্মশুদ্ধির অন্যতম পবিত্র মাস মহররম

উসমান বিন আবদুল আলিম
পড়তে লাগবে 4 মিনিট

মহররম শব্দের অর্থ, সম্মানিত বা নিষিদ্ধ। আরবী পঞ্জিকার প্রথম মাস এটি । এই মাসকে আরবী বারো মাসের মধ্যে সবচে’ সেরা মাস হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে।
এ মাস আমাদের জন্য যেরকম সুসংবাদের তেমনি শোকেরও। এ মাসে পৃথিবীতে বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার নিজের কুদরতি প্রকাশ করেছেন।এ মাসে আল্লাহ তাআলা বনী-ইসরাঈলদের জন্য নদীকে রাস্তা বানিয়ে পার করে দিয়েছেন আবার এদিকে ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনীকে নদীতে ডুবিয়ে মেরেছেন । এই মাসে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর শাহাদাতের মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে।

এই মাস আল্লাহ তায়া’লা কাছে-ও অনেক মর্যাদাপূর্ণ, তাই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছেও অধিক সম্মানের।
আল্লাহ তায়া’লা কোরআন কারীমে বলেন, ‘ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি_যেদিন থেকে তিনি আকাশ ও নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি হল সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এই মাসগুলোর (সম্মান নষ্ট করে) নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না’। (সূরা তাওবা-৩৬)

তাফসীরের কিতাবে বলা হয়েছে। ওই সম্মানিত চার মাস হল _মহররম, রজব, জিলকদ ও জিলহজ্ব।(তাফসীরে বাগাবী -৪/৪৪)

আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন;আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাতের কোন অংশ উত্তম? এবং কোন মাস উত্তম? তিনি বলেন ;রাতের মধ্যে উত্তম হলো গভীর রাত। মাস গুলোর।মধ্যে উত্তম হলো আল্লাহর মাস। যেটাকে তোমরা মহররম বলে থাকো।
(নাসাঈ-৪৬১২)
এই আয়াত ও হাদীস থেকে এ মহররম মাসের ফজিলত সুস্পষ্ট হয়।তাই আমাদের প্রত্যেককে আমল করার মাধ্যমে এ মাসের সম্মান হেফাজত করতে হবে, বিনষ্ট করা যাবে না।যেই মাস আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের কাছে প্রিয় ও সম্মানের হয়,একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের কাছেও এ মাস সম্মানের হওয়া জরুরি।

এখন এ মাসকে আল্লাহর রাসুল ও তাঁর প্রিয় সাহাবায়ে কেরাম কীভাবে সম্মানিত করেছেন তা জানতে হবে এবং আমাদেরকে এ মাস সম্মান করতে হলে কী-কী করতে হবে ও বর্জন করতে হবে তাও জানতে হবে। নিম্নে সংক্ষেপে কিছু আলোকপাত করার প্রয়াস পাবো ইন শা আল্লাহ।

যেহেতু এ মাস রমজান মাসের ন্যায় অনেক ফজিলতের তাই আমাদের এ মাসকে সম্মান করতে হলে _বেশি-বেশি নফল রোজা,নামাজ,যিকির-আযকার ও ইস্তেগফার করতে হবে।
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন; রমজানের পর সবচে’ ফজিলতপূর্ণ রোজা হচ্ছে মহররমের রোজা আর ফরজ নামাজের পর সবচে’ উত্তম নামাজ হচ্ছে গভীর রাতের নামাজ।
(মুসলিম-২৬৪৫)
এ মাসে সাওয়াব অর্জনের আরেকটি সুবর্ণময় সুযোগ রয়েছে আশুরার রোযার মাধ্যমে। এ মাসের একটি দিনকে আশুরার দিন বলা হয়।এ দিনটি বিভিন্ন দিক থেকেও ফজিলতের। এইদিনে রোযা রাখলে আল্লাহ তায়া’লা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের সাওয়াব দিয়ে থাকে,সুবহানাল্লাহ ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন;আমি আল্লাহর দরবারে আশা রাখি যে, আশুরার রোজায় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করা হবে।
(সহীহ্ মুসলিম)

তবে এই মাসকে কেন্দ্র করে বা এমাসের বিশেষ দিন আশুরাকে সামনে রেখে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা বা কুসংস্কার পালন করা যাবে না। আতশবাজি, তাজিয়া মিছিল বের করা, নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝরানোর মতো জঘন্য ও পরিহারযোগ্য কোন কাজ করা যাবে না।

সুতরাং, একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে উচিত হল ;এই ফজিলতপূর্ণ মাস মহররমকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে নিজের গুনাহ মাপ ও আমলের ভাণ্ডার সমৃদ্ধি করায় ব্যতি-ব্যস্ত থাকা।সব ধরণের খারাপ কাজ,কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি থেকে নিজেকে দূরে রাখা।

আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে সঠিক বুঝার ও সঠিকভাবে আমল করার তৌফিক দান করুক,আমীন।

লেখক, উসমান বিন আব্দুল আলিম।
মোহাদ্দিস,জামি’য়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সাভার,ঢাকা

শেয়ার করুন
উসমান বিন আবদুল আলিম একজন উদীয়মান ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক। তরুণ বয়সেই তিনি ইসলামের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞানার্জন ও গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। কুরআন, হাদীস, ইসলামি দর্শন ও ইতিহাসের ওপর তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং চিন্তাশীল লেখনিতে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইসলামি মূল্যবোধ ও আধুনিক চিন্তার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একটি সময়োপযোগী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছেন, যা বর্তমান প্রজন্মকে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য বুঝতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, তিনি নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লেখালেখি করছেন — যেখানে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, আত্মউন্নয়ন এবং সমাজ সংস্কারের বিষয়ে তার বিশ্লেষণ প্রশংসিত হচ্ছে।
মন্তব্য নেই

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।