‘গ্রাম’ শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফসলের খেত, ছোট ছোট ঘর, বাড়ির সামনের উঠানে লাউয়ের মাচা, বাড়ির পাশে জমিতে নানান সবজির চাষ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ যেন এক ভিন্ন গ্রাম।
মাইলের পর মাইল বসতবাড়ি, স্কুল, বাজার—যেখানেই চোখ পড়ে, শুধু গোলাপ আর গোলাপ। গোলাপের আধিপত্যে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের নাম লোকমুখে পরিবর্তিত হয়ে পরিচিতি পেয়েছে ‘গোলাপ গ্রাম’ হিসেবে।
একসময় এই গ্রামে মানুষ শখের বসে গোলাপ চাষ করলেও বাণিজ্যিকভাবে এখানে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু হয় ১৯৯০ সালের দিকে।
এসব গ্রামের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস এখন এই গোলাপ ফুল। গোলাপের পাশাপাশি জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, কসমস, ক্যালেন্ডুলা, গাঁদা প্রভৃতি ফুলের চাষও হয় এখানে
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর থাকে গোলাপ গ্রাম। ব্যস্ত শহুরে জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চলে যান গোলাপের রাজ্যে। বাগান থেকে যেমন টাটকা ফুল কেনা যায়, তেমনি স্থানীয় শ্যামপুর ও মৈস্তাপাড়ায় গড়ে ওঠা রাতের ফুলের বাজার থেকে স্থানীয় ফড়িয়ারা ফুল কিনে সরাসরি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন। বিভিন্ন উৎসবের ওপর ভিত্তি করে সাধারণত বাগান ও স্থানীয় বাজারে গোলাপের দাম ২ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সাভার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাভারের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। বিরুলিয়া ইউনিয়নে ২০০ থেকে ২২০ হেক্টর জমিতে এবং বনগাঁও ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের বেশ কিছু জায়গায় ফুলের চাষ হচ্ছে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বড় অঙ্কের বাণিজ্যের আশা করছিলেন ফুলচাষিরা।
গাবতলী বাসস্টান্ড থেকে যে কোনো বাসে সাভার বাসস্ট্যান্ডের ওভারব্রিজের নিচে নেমে ওভারব্রিজ পাড় হয়ে পূর্ব দিকের বিরুলিয়া ইউনিয়নের রাস্তায় যেতে হবে।
সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত হ্যালো বাইকে করে ভাড়া ২০ টাকায় পৌঁছে যাবেন স্বপ্নের মতো সুন্দর গোলাপ গ্রামে।
এ ছাড়াও মিরপুর শাহআলী মাজারের সামনে কোনাবাড়ী বাসষ্ট্যান্ড থেকে বাসে করে আকরান বাজার। ভাড়া পড়বে ২০ টাকা। সেখান থেকে ১০ টাকা অটো ভাড়ায় সাদুল্লাহপুর গ্রামে যেতে পারবেন। নিজস্ব পরিবহনে যেতে চাইলে এই পথ দিয়ে যাওয়া যাবে।
লেখক ও গবেষক