মাসিক নবীনকণ্ঠ জুন-২০২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত ছড়া ও কবিতাগুচ্ছ

মাসিক নবীনকণ্ঠ জুন-২০২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত ছড়া ও কবিতাগুচ্ছ

উসমান বিন আবদুল আলিম
পড়তে লাগবে 11 মিনিট

নারীর সম্মান
শাহজালাল সুজন

নারীর মূল্য অপরিসীম
ইসলামেতে জানি,
নারী হলো মায়ের তুল্য
ক’জনে তা মানি।

নারীর প্রতি কোমলতা
বলছে মহান রবে,
কুরআনেতে সুরা নিসা
দেখো খুলে তবে।

কলিযুগের কড়াল গ্রাসে
নীতি যাচ্ছে ক্ষয়ে,
নারীরা আজ লাঞ্ছিত হয়
অন্ধ বিবেক সয়ে।

বঞ্চিত হয় পৈতৃক ভিটা
বৈষম্যতা ঘিরে,
ইসলাম প্রীতি প্রয়োগ হলে
আসবে শান্তি ফিরে।

শ্রীপুর, গাজীপুর, ঢাকা

নারীই মাতা
আব্দুল মোক্তার

যত নারী করো তারই
কদর মায়ের তুল‍্য
নারী বিহীন জগত শ্রীহীন
সভ্যতার নেই মূল্য।

বিশ্বে নারী পাহাড় সারি
শত্রু রোধের দেয়াল
বিপদ আপদ প্রাণ দিয়ে রদ
সন্তানে দেয় খেয়াল।

নারী সাগর দুধের আকর
স্নেহ মায়ার খনি
নয় বরবাদ বিশ্ব আবাদ
হীরা মুক্তা মণি।

কেউ বলো না সে অবলা
সহ্য গুণের পাত্রী
যত অন‍্যায় লোকে চাপায়
বাধ্য সহনধাত্রী।

এসো সবাই সম্মান জানাই
পুরুষের সে সমান
তাদের হেয় নয় পাথেয়
স্পষ্ট প্রতীয়মান।

রামতারক হাট, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর (প:বঙ্গ, ভারত )

মা
মাহবুবা আক্তার তামান্না

মায়ের স্নেহ আদর পেতে
মনটা ভীষণ কাঁদে
বন্দী আমি এমন সময়
ব্যাস্ততারই ফাঁদে।

সুন্দর এই জীবন পেলাম
মায়ের ত্যাগের ফলে
হেসে খেলে হলাম বড়
আমার মায়ের কোলে।

বাস্তবতা নিচ্ছি মেনে
কষ্ট হলেও হোক
মায়ের কোলে যেতে কভু
উথলে উঠে শোক।

সন্ধ্যা কিবা সকাল হলে
মাকে আমি স্মরি
মা আমার থাকুক ভালো
এই কামনা করি।

ওলামা বাজার, সোনাগাজী, ফেনি

নারী
মাহমুদা আক্তার

নারী তুমি আজও অভিশপ্ত, আজও তুমি অসহায়
তুমি আজও জন্ম নিলে পরিবার করে মুখ ভার,
তুমি বড় হবে খুবই রক্ষণশীল নিয়মনীতি মেনে
তুমি পড়বে,ভাল রেজাল্ট করবে উদ্দেশ্য ভালো বিয়ে।
তুমি সংসারের অশান্তি মুখ বুঁজে সহ্য করলে ভালো
না পারলে মা বাবার শাসনের অভাব ছিল নিশ্চিত।

তুমি কখনো কারো মেয়ে,কারো বউ,কারো মা
জন্মের পর তোমার আশ্রয় বাপের ঘর,
বিয়ের পর স্বামীর ঘর আর পরে ছেলের ঘর
তোমার নিজের কোন নাম নেই,পরিচয় নেই,ঘর নেই।

সমাজ যা—ই বলুক তবু বলবো নারী তুমি মহান
তুমি দশ মাস অব্দি সন্তানকে করেছো গর্ভেধারণ।
অনেক কষ্ট, অনেক ত্যাগ সহ্য করে তাকে জন্ম দিয়েছো
এ ধরিত্রীর বুকে তোমার সন্তানকে লালন করেছো।

কখনো হাজারো কষ্টেও তোমার চোখে জল আসেনা
তুমি আঁচল দিয়ে লুকিয়ে রাখ তোমার শত বেদনা।
তুমিই পার প্রিয়জনের জন্য প্রহর গুণতে,
সব সম্পর্কগুলোকে এক সুতোয় বেঁধে রাখতে।

তুমি কখনো জননী,কখনো বধু, কখনো ঘরকণ্যা
কখনো স্বরস্বতী,কখনো দশভুজা, কখনো অন্নপূর্ণা।
প্রতিটি রূপেই তুমি অনন্যা,রূপবতী
তুমি শিক্ষিতা, তুমি ঘরে ও বাইরে সফল,গুণবতী।

তুমিই পারো তোমার মায়াবী হাতের ছোঁয়ায়
পৃথিবীকে নতুন রঙে রাঙাতে,নতুন রূপে সাজাতে।
প্রয়োজন শুধু সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীটা বদলানো
নারী শুধু নারীই নয়, সে একজন মানুষ।

নারীর অধিকার ও মর্যাদা
মোবাশ্বেরা বিনতে মাসঊদ

নারী!
সে তো শুধু রূপের খেলনা নয়,
সে তো আল্লাহর দেয়া জীবনের আলো, হোক সে যেকোনো বেলায়ই পণ্য।
মা, বোন, বউ, সে আমাদের ভালোবাসার ঠিকানা,
তার স্নেহ ছাড়া জীবন শূন্য, তার মর্যাদা আমাদের গর্বের জানানা।

ইসলাম আসার আগে ছিল নারীর অবহেলা,
কন্যা সন্তান হলে মরতো তার স্বপ্ন, হত নিপীড়নের বেলা।
কিন্তু কোরআন এলে বলল স্পষ্ট কথা,
নারীর সম্মান দিবে আল্লাহ, সে অধিকার পাবে সঠিক রথ।

খাদিজা (রা.) সাহেবা ছিলেন নবীর সহচর,
সাহস আর ভালোবাসায় ছিলেন অনন্য এক মক্তার।
আয়েশা (রা.) শিক্ষিকা, জ্ঞানের মন্দির,
নারী হতে পারে জ্ঞানী, সাহসী, ও মেধাবী ইতিহাসের পাতা।

ফাতিমা (রা.) ছিলেন আদর্শ নারী,
ধৈর্য আর ভক্তিতে ছিলেন সবার চেয়ে এগিয়ে।
ইসলাম দিয়েছিল নারীর অধিকার অনেক,
স্বামীর সম্পদে, পিতার সম্পদে তার অধিকার যেন শক্ত অটল।

নারী পুরুষের সঙ্গী, সে আল্লাহর দেওয়া দায়িত্ব,
“তোমরা একে অপরের পোশাক”, এই বন্ধনই তাদের পরিচয়।
মা হলে জান্নাত তার পা তলায়,
তার স্নেহে গড়ে ওঠে সুন্দর জীবন ও পরম ভালোবাসার পালা।

আজকের সমাজে নারী অনেক কষ্টে থাকে,
কেউ তার সত্তা বুঝে না, কেউ তার মর্যাদা দেয় না।
তবে ইসলাম বলে পর্দা মানে সম্মান,
এটা বাধা নয়, বরং নারীকে দেয় সুরক্ষা ও প্রাণ।

নারী হতে পারে শিক্ষিকা, চিকিৎসক, নেতা,
তবে তার সম্মান রক্ষা করাও আমাদের বড় দায়িত্বে।
চলো আমরা সবাই মিলেমিশে করি প্রচেষ্টা,
নারীর অধিকার রক্ষা করে গড়ে তুলি উন্নত জাতির শক্ত বেলা।

আমি নারী
পিপীলিকা

আমি নারী,
আজ আমি সবকিছু পারি।
এ সমাজের পুরুষের সাথে
কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে চলতে।

আমি নারী,
আমি সূর্যের জ্যোতি
আমি সংগ্রামের অগ্নিশিখা, অদম্য, নির্ভীক।
আমি সাহস, স্বপ্ন ও শক্তির মূর্তি,
আমি ধ্বংস করি আঁধার,
আমি সৃষ্টির সুরভি।

আমি নারী,
আমি জ্ঞান, বিদ্যা ও বিজ্ঞানের আশীর্বাদ,
কলমের অমর কালি, জয়ের সাধ।
আমি মহাকাশের অভিযাত্রী,
দূর নভোমণ্ডলে, প্রযুক্তির অগ্রযাত্রী,

আমি নারী,
আমি চিকিৎসক, বিজ্ঞানী ও অধ্যাপিকা,
আমি রাষ্ট্রনায়িকা, উদ্যোক্তা, নীতি নির্ধারক।
আমি কবি, শিল্পী, গীতিকার,
আমি সুরের মূর্ছনা, তুলি ধরে আঁকি অঙ্কার।

আমি নারী,
লড়াই করি সমাজের সব শৃঙ্খল ভেঙে,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াই বুক চিতিয়ে।
সাম্যের দাবিতে গর্জে উঠি,
অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাই দৃপ্ত ভঙ্গিতে।

আমি নারী,
আমি আগুনের শিখা, ঝড়ের তাণ্ডব,
নির্যাতিতার কান্না, প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর।
আমি যুদ্ধজয়ী বীরাঙ্গনা, ইতিহাসের সাক্ষী,
জয়ধ্বনি তুলতে জানি, আমি বিশ্ব জয়ী।

আমি নারী,
আমি মা, কন্যা, সহধর্মিণী,
আমি পথপ্রদর্শক, সমাজের নির্ভরযাত্রী।
দুঃখী হৃদয়ের সান্ত্বনা, ভালোবাসার ভাষা,
শোকের মাঝে হাসি, সুফলের আশা।

আমি নারী,
আমি কৃষক, শ্রমিক, দেশের কাণ্ডারী,
যুদ্ধের ময়দানে, বিজয়ের রণযাত্রী।
আমি নির্ভীক, অনড়, অটল বিশ্বাস,
জীবনদাত্রী, মৃত্যুঞ্জয়ী, চির অম্লান আশ্বাস।

আমি নারী,
আমি থামতে জানি না,
একা পথ চলতে জানি, লক্ষ্য ঠিক রেখে,
জিততে শিখেছি আমি, হারিনি কখনও!

শ্রী রাজু বাসকে
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

শতরূপে নারী
সঞ্জয় বৈরাগ্য

নারী তুমি স্নেহময়ীরূপে ভবে বিরাজিতা,
কখনও বা অসুর নিধনে দশভূজা মাতা।
নারী তুমি মা ভগবতী, আর্তের বরাভয়
কখনও আবার সারদারূপে করুণার আশ্রয়।
তুমি নারী ঝাঁসির গর্ব রাণী লক্ষ্মীবাঈ
তুমিই আবার ভগিনী নিবেদিতা, আমার বাংলায়।
নারী তুমি সাহসিনী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
কখনও বা তুমি আবার পুরুষেরই অহংকার।
নারী তুমি, “হাজার চুরাশীর মা”, দেবী মহাশ্বেতা
কখনও বা শিক্ষয়িত্রীরূপে বেগম রোকেয়া।
তুমি নারী আলোকময়ী ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল
মাদার টেরেসারূপে করলে দীনেরই মঙ্গল।
নারী তুমি না থাকলে জগৎ অন্ধকার
তুমিই যে, এ ভুবনে সকল সৃষ্টির আধার।
নারী তুমি কন্যা, জায়া, ভগিনী আর জন্মভূমি
শতরূপে পূজ্য তুমি, তাই তো নারী তোমায় নমি।

আমি ধর্ষিতা
জিৎ মন্ডল

যেদিন ওরা জোর করে
আমার ধর্ষণ করেছিল,
সেদিন আমার করুণ চিৎকারে
আকাশ বাতাস স্তব্ধ হয়েছিল
শুধু শান্ত হয়নি ওরা।

আমার রক্তাক্ত শাড়ির আঁচল
মৃদু হাওয়ায় দূলে দূলে বলেছিল
আর নয় নির্মমতা, আর নয় পাশবিকতা
নারীরাও মানুষ।

আমার অর্ধ নগ্ন শরীর দেখে
পথচারী এক কুকুর গন্তব্য ভুলে
কাছে এসেছিল।
আর আমাকে রক্ষার জন্য
বার বার বিভৎস সুরে ঘেউ ঘেউ করে ডাকছিল।
কিন্তু কোন মানুষ আসেনি।
দূর থেকে কিছু শকুন
কামনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে
রক্তের স্বাদ নিতে চেয়েছিল।

অনেক কষ্টে বাড়িতে ফিরে
রক্ত মাখা শরীরে যখন
মায়ের সামনে দাঁড়ালাম,
মা চিৎকার দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
ওরে হতভাগী
তুই যে জীবনের শ্রেষ্ঠ ধন হারালি।

কিন্তু আমার দাদা বলেছিল অন্যকথা
দাদা বলেছিল
আজ থেকে সবাই বলবে
এটা ধর্ষিতার পরিবার
আমি ধর্ষিতার দাদা,
এই সমাজে এখন
মুখ দেখানো বড় দায়।

আমি চোখের জলে মাথা নিচু করে
দাদাকে বলেছিলাম,
যে সমাজ একটা নারীর দায় নিতে পারেনা
সমভ্রম রাখতে পারেনা,
সে সমাজ আমি মানিনা।
আর যাহোক সে সমাজে কোন
মানুষ থাকেনা।
সে সমাজে রাজত্ব করে
মনুষত্ব বিকৃত মানুষ নামের কিছু পশু,
অন্ধকারেই যাদের বাস।।

নারীর নাম শ্রদ্ধা
মো.রবিন ইসলাম

সে আলো, সে আগুন, সে স্নেহের ঢেউ,
সে সাহসের গাথা, সে ব্যথার নৌ।
জননী রূপে সে জীবন গড়ে,
ভালোবাসায় জাগায় হৃদয়ের দরোজা।

শরীর নয় শুধু, সে চেতনার শিখা,
সে নিঃশব্দ বেদনায় আশার দিকা।
তার চোখে ঝরে স্বপ্নের ধারা,
তার কণ্ঠে বাজে মুক্তির তারা।

কেন তবে তারে করো অবহেলা?
কেন আঁকো বুকে বঞ্চনার খেলা?
সে—ও তো মানুষ, সে—ও তো আলো,
তাকে দাও সম্মান, দাও ভালোবাসার পালো।

নারী মানে নয় করুণা—চাওয়া,
সে নিজেই সাহস, সে জাগরণের ছায়া।
দাও তার অধিকার, দাও তার ভাষা,
তার পায়ে রেখো না শোষণের বাঁশা।

তবেই গড়বে এক ন্যায়ের সমাজ,
যেখানে থাকবে না অন্যায়ের সাজ।
নারীর নাম হোক সম্মান—গাঁথা—
জীবনের পটে শ্রেষ্ঠ কথা।

তরুণ লেখক ও শিক্ষার্থী

প্রাণনাশ
বাশার আনাম

গরিব বাপের সুন্দরী মেয়ে নামটি তার আলিয়া
বুদ্ধিমতী মেয়ে সে কথা বলে হাসিয়া।
লেখাপড়ায় ভালো সে স্বভাব চরিত্রও ভালো
যে ঘরে যাবে সে, ফুটবে সেই ঘরে আলো।

বাপের স্বপ্ন মেয়েকে বিয়ে দিবে ধুমধাম করে
মেয়ে আমার থাকবে অনেক সুখে স্বামীর ঘরে।
ধুমধাম করে একদিন বিয়ে হলো তার
স্বামী যেন তার কাছে শ্রেষ্ঠ উপহার।

বিয়ের শুরুতে স্বামী ভালোই ছিল তার
কয়েক বছর পরই পায় দুঃখ উপহার!
দুঃখে মন কান্দে তার নাইতো মন খুশি
যৌতুকের তরে স্বামী তারে, মারে কিল ঘুষি!

স্বামী তারে বলে দেয় সাফ—সাফ কথা
যৌতুকের টাকা না দিলে পেতে হবে ব্যথা।
যৌতুকের টাকা কোথায় পাবে আমার গরিব বাপে
বাপের কাছে ক্যামনে বলবো দুঃখে মন কাপে!

স্বামী আমার মন বুঝে না শুধু চাই পণ
রাতে দিনে মারে, চেয়ে—চেয়ে দেখে লোকজন!
কত স্বপ্ন ছিল আলিয়া থাকবে অনেক সুখে
যৌতুকের কবলে পড়ে এখন, অশ্রু ঝড়ে দু’চোখে!

এক মিনিশে শেষ হলো তার সুখ স্বপ্নবাস
যৌতুকের তরে আলিয়ার হইলো প্রাণনাশ।

শ্রীবরদী, শেরপুর।

নারী
হাবীবুল্লাহ মাহমুদ

হে মুসলিমা!
তুমি আত্মসম্মানী, তুমি উম্মাহের গর্বিত নারী,
তুমি কিভাবে পারো?
বিধর্মী যুবকের মন খুশিতে
সরাতে আঁচল—শাড়ী।

তুমি না মহীয়সী?
ভবিষ্যত প্রজন্মের সাহসী জননী,
তোমায় কেন দেখবে ওরা?
তুমি তো নও কোন নর্তকি।

হে উম্মে আমারাহ!
তোমার ইজ্জতের মূল্য কি তুমি বুঝোনা?
এক পাশে তোমার আব্রু, বিপরীতে পুরো জাহান
তবুও তো সমমান হয় না।

হে বিনতে সুমাইয়া!
ইতিহাস কি তোমার কাছে অজানা?
দেখো না! যুগে যুগে ইসলাম
তোমাকে দিয়েছে কত মর্যাদা।

তুমি জন্ম দিবে “ইয়াহইযা সিনওয়ার
বিন কাসিম আর ইবনে যিয়াদ,
তুমি ইতিহাসে হবে আঁধার তাড়ানো নক্ষত্র
প্রজন্ম জানাবে তোমায় সাধুবাদ।

কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

আরশের আমানত
আতিয়া মাহজাবিন

আমি নারী—
আমি শ্রেষ্ঠ স্রষ্টার নিখুঁত প্রজ্ঞায় গঠিত,
আল্লাহর হুকুমে আঁকা প্রথম মানবীর প্রতিচ্ছবি।
আমি কেবল লাবণ্যময়ী রূপসীই নই—
আমি একটি অদৃশ্য দীপ্তি,
যা মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্যে প্রতিফলিত।

আমার কাঁধে লেখা ইতিহাসের দুঃসাহসিক বর্ণমালা,
আমি খাদিজা, যিনি প্রথম ঈমানের সাক্ষর এঁকেছিলেন;
আমি ফাতিমা, যাঁর বিনয়েই পবিত্রতা পায় সাহাবিয়াতের শান।
আমি আয়েশা, জ্ঞান ও হিকমাহর দীপ্ত দীপশিখা,
আমি নুসাইবাহ, যুদ্ধের ময়দানে যিনি তলোয়ার ধরেন কাঁপা হাতে নয়, ঈমানের দৃঢ়তায়।

তবু জিজ্ঞাসা করি—
এই বিশ্ব কি সত্যই জানে, কে আমি?
কে রেখেছে আমার মর্যাদার প্রকৃত সংজ্ঞা?
যেখানে আমার লজ্জা হয়ে দাঁড়ায় পরিহাস,
আর অধিকার পরিণত হয় সহানুভূতির অনুদান!

জানো কি?
আমার পর্দা— কোনো শৃঙ্খল নয়, বরং আত্মমর্যাদার আবরণ,
আমার মৌনতা— দুর্বলতা নয়, বরং সংযমের দীপ্তিময় ভাষ্য।
আমি সেই—
যার গর্ভে নবীরা জন্মে,
যার দো’আয় জাতি গড়ে উঠে,
যার দৃষ্টিতে মিশে থাকে উম্মাহর সাহস।

আমি আরশের আমানত—
জমিনে পাঠানো এক গোপন সৌন্দর্য,
যার মর্যাদা নিছক “সমতা”য় নয়—
বরং আল্লাহর বিধানে সংরক্ষিত এক পবিত্রতা।

তাই হে সমাজ!
জাগো— চোখ মেলে দেখো আমার আসল রূপ।
আমার কথা নয়, আমার মর্যাদা বুঝো কুরআনের আয়াতে;
আমার অধিকার রক্ষা করো, যেন তা হয় খলিফার সুনীতি,
হয় না যেন দুনিয়ার কুটিল রাজনীতির ভোগ্যসামগ্রী!

আমি নারী—
আমি নই কেবল এক পরিচয়,
আমি এক উম্মাহর গৌরব,
এক সভ্যতার স্তম্ভ,
এক দীপ্ত আরশী নিদর্শন।

নারী—তবু পথ চলে
মোঃ হাসান মাহমুদ

কৃষ্ণচূড়ার রঙ লেগে আছে
রক্ত—ঘামে মিশে আছে
ওড়নার প্রান্তে
কাঁদো তুমি গোপনে একান্তে।

পথের ধুলো জড়ায়ে অঙ্গে
কাঁচের চুড়ির মতো মন ভাঙে
কতশত স্বপ্ন পাখা মেলে
মুছে যায় আবার সেই চোখের জলে।

ছিন্ন বস্র, দু’মুঠো খাবার ভাসি
তবু মুখে তার হাসি,
টিফিন ক্যারিয়ার হাতে ছুটে চলে
ছুটে চলে সকালে—বিকেলে।

তবু সে পথ চলে
তার স্বপ্নরা ডানা মেলে
তবু সে লড়ে যায়
ভাগ্য কি তার বদলায়?

ঘামে আর শ্রমে
কভু নাহি সে ধমে
মানে না কখনই হার
শেষ হয় না এই পথ চলার।

মিরপুর—১১, পল্লবী, ঢাকা ১২১৬, বাংলাদেশ

শেয়ার করুন
উসমান বিন আবদুল আলিম একজন উদীয়মান ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক। তরুণ বয়সেই তিনি ইসলামের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞানার্জন ও গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। কুরআন, হাদীস, ইসলামি দর্শন ও ইতিহাসের ওপর তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং চিন্তাশীল লেখনিতে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইসলামি মূল্যবোধ ও আধুনিক চিন্তার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একটি সময়োপযোগী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছেন, যা বর্তমান প্রজন্মকে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য বুঝতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, তিনি নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লেখালেখি করছেন — যেখানে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, আত্মউন্নয়ন এবং সমাজ সংস্কারের বিষয়ে তার বিশ্লেষণ প্রশংসিত হচ্ছে।
মন্তব্য নেই

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।