বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধারার শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে—কওমি, মাদানি, আলিয়া এবং স্কুল—কলেজ—ভার্সিটি। কিন্তু প্রশ্ন জাগে—যেখানে সিংহভাগ মানুষ মুসলিম, সেখানে কেন এত ভিন্নতা? এর উত্তর সহজ—কোনো শিক্ষাধারাই পূর্ণাঙ্গ নয়। আর অপূর্ণতার ফাঁক পূরণ করতেই জন্ম নেয় নতুন উদ্যোগ।
এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটেই শুরু হয় এক নতুন চিন্তার যাত্রা। মৌলিক ইসলামি জ্ঞান অক্ষুণ্ণ রেখে আধুনিক ও জাগতিক শিক্ষার সঙ্গে সুসমন্বয় ঘটানো যায় কিনা—এই মহৎ ভাবনা থেকেই ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদরাসাতুল হিকমাহ আল ইসলামিয়াহ।
প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন দূরদর্শী আলেম, হাফেজ মাওলানা আবু সালেহ রহমানী। তিনি শুধু একজন আলেম নন, বরং এক চিন্তাশীল শিক্ষাবিদ ও সাহসী অগ্রযাত্রার প্রবর্তক। শিক্ষাব্যবস্থার বিচ্ছিন্নতা ও অপূর্ণতা তাঁর অন্তরে আলোড়ন তুলেছিল। দৃঢ় ঈমান, অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তিনি গড়ে তুললেন এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে ইসলামি ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক অনন্য সমন্বয় ঘটেছে। তাঁর নিরলস সাধনা ও প্রজ্ঞার ফলেই মাদরাসাতুল হিকমাহ অল্প সময়েই শিক্ষাঙ্গনে এক সফল মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সুসমন্বিত পাঠ্যক্রম:
মাদরাসার পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে মাদানি নেসাবকে মূলভিত্তি রেখে। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে কওমি মাদরাসার সিলেবাসের প্রয়োজনীয় অংশ এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের কিছু বিষয়। পাশাপাশি রয়েছে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগে রচিত ও সংগৃহীত বিশেষ সংযোজন।
ফলে শিক্ষার্থীরা একদিকে ইসলামের খাঁটি জ্ঞান অর্জন করছে, অন্যদিকে আধুনিক জ্ঞান—বিজ্ঞান, ভাষা ও সমকালীন চিন্তাধারার সাথেও পরিচিত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই সমন্বিত কাঠামো প্রত্যাশিত সুফল বয়ে এনেছে এবং ভবিষ্যতে আরও আলোকোজ্জ্বল সাফল্যের পথ রচনা করবে, ইনশাআল্লাহ।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
তালিম ও দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের শাশ্বত বাণীকে বিশ্বমানবতার কাছে পৌঁছে দেওয়া।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বিরোধী ও খোদাদ্রোহী ভ্রান্ত মতবাদের মোকাবেলা করা।
ইসলামি ও আধুনিক জ্ঞান—বিজ্ঞানে বিদগ্ধ, দেশপ্রেমিক ও আদর্শ প্রজন্ম তৈরি করা।
আরবি ভাষা ও ইসলামি সভ্যতা, সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটানো।
ইসলামী ঐতিহ্য পুনর্জীবিত করা এবং আধুনিক বিশ্বে তার যথার্থতা প্রমাণিত করা।
অর্জনসমূহ:
৭০০ জন হাফিজে কুরআন।
৫৫০ জনের অধিক দাওরায়ে হাদিস উত্তীর্ণ।
৪০০ জন আলিম উত্তীর্ণ।
জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দেশসেরা প্রতিষ্ঠান হওয়ার গৌরব অর্জন।
কাতার, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ।
বেফাক ও হাইয়াসহ সব বোর্ড পরীক্ষায় মেধা তালিকায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর।
১২০+ শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেলসহ শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত।
বিদেশে স্কলারশিপে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ৮০ জনেরও বেশি।
১০০০+ শিক্ষার্থী নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা সমাপ্ত করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে।
বর্তমানে মাদরাসার প্রধান ক্যাম্পাসে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এবং ৩০ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়মিত পাঠদান করছেন।
বিভাগসমূহ:
ইবতিদায়ি নুরানি বিভাগ
স্বতন্ত্র নাজেরা বিভাগ
হিফজুল কুরআন বিভাগ
কিতাব বিভাগ
আমাদের ক্যাম্পাসসমূহ:
প্রধান ক্যাম্পাস : বাড়ী—১৭, রোড—২, সেক্টর—৬, উত্তরা, ঢাকা।
গাজীপুর স্থায়ী ক্যাম্পাস : সাইটালিয়া বাজার, শ্রীপুর, গাজীপুর।
রায়পুর স্থায়ী ক্যাম্পাস : উত্তর কেরোয়া, রায়পুর, লক্ষীপুর।
পঞ্চগড় স্থায়ী ক্যাম্পাস : হালুয়াপাড়া, হাড়ীভাসা, সদর, পঞ্চগড়।
কক্সবাজার স্থায়ী ক্যাম্পাস : কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, উখিয়া, কক্সবাজার।
বালিকা হিফজ ক্যাম্পাস : ১৯০৭, গণকবরস্থান রোড, ফায়দাবাদ, দক্ষিণখান, ঢাকা।