বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তরুণ প্রজন্মের নৈতিক চর্চা আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব, রাজনৈতিক পরিবেশ এবং শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন তরুণদের মানসিকতা, মূল্যবোধ ও নৈতিক অবস্থানকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। একদিকে, বর্তমান তরুণরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি তথ্যসমৃদ্ধ, প্রযুক্তিবান্ধব ও যুক্তিবাদী হয়ে উঠেছে। তারা অল্প সময়ের মধ্যে সামাজিক ইস্যু নিয়ে সচেতন হতে পারছে, নিজেদের মতামত প্রকাশ করে এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় অংশগ্রহণ করছে। দুর্নীতি, সহিংসতা, বৈষম্য বা নারী অধিকার নিয়ে তারা সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। অনেক তরুণ সমাজসেবামূলক কার্যক্রম, পরিবেশ রক্ষা, কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। এসব দিক বিবেচনায় তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ নৈতিকতার প্রতি সচেতন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
তবে অন্যদিকে আপত্তির জায়গা হলো, তরুণ সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন মাদকাসক্তি, পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, প্রতারণা বা ভার্চুয়াল জগতে মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার এখন অনেক তরুণের নৈতিক স্খলনের দিক নির্দেশ করে। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, অনৈতিক উপায়ে চাকরি বা সুযোগ পাওয়ার চেষ্টা, কিংবা দ্রুত সফল হওয়ার মানসিকতা অনেক সময় তরুণদের সৎ পথ থেকে বিচ্যুত করছে।
এছাড়াও, পারিবারিক অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষার অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অনির্ভরযোগ্য মিডিয়া কনটেন্ট অনেক তরুণকে বিভ্রান্ত করছে। অনেক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকৃত নৈতিক শিক্ষা বা আদর্শ নেতৃত্বের অভাবও তাদের পথভ্রষ্ট করছে।
আশার কথা হলো, তরুণদের মধ্যে আত্মজিজ্ঞাসা, ভুল স্বীকারের প্রবণতা এবং নিজেকে সংশোধনের চেষ্টাও চোখে পড়ছে। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে, অনলাইন বা স্যোশাল মিডিয়ায় এবং অফলাইনে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তরুণরা নৈতিকতা, মানবিকতা, সহমর্মিতা, এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে কথা বলছে; যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে এটিও মানতে হবে যে, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এক জটিল দ্বৈত বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। তারা যেমন প্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় সম্ভাবনাময়, তেমনি নৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখেও রয়েছে। এই প্রজন্ম যদি সঠিক দিকনির্দেশনা, পরিবার ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা, এবং রাষ্ট্রের ইতিবাচক ভূমিকায় পথ চলে। তাহলে তারা নৈতিকভাবে শক্তিশালী, মানবিক ও আদর্শ নাগরিকে পরিণত হতে পারবে। এমন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলাটাই তরুণ প্রজন্মের মুখ্য বিষয়।
মোদ্দা কথা, তরুণ প্রজন্ম নৈতিকতা নিয়ে সম্পূর্ণভাবে উদাসীন নয়, বরং অনেকেই সচেতন ও দায়িত্বশীল। তবে এই সচেতনতাকে আরও বিস্তৃত ও গভীর করতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এই চেষ্টাই আগামী দিনের জন্য একটি নৈতিক, মানবিক ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক হবে।
মু. সায়েম আহমাদ
লেখক ও সংগঠক