সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে নবিজি সা.

আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফি হাফি.

উসমান বিন আবদুল আলিম
পড়তে লাগবে 11 মিনিট

মানবসমাজে শান্তি ও নিরাপত্তার সৌরভ ছড়িয়ে দেওয়া ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি মিশন। সে লক্ষ্যেই ইসলাম সকলপ্রকার সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। ইসলাম তার অনুসারীদের মুসলিম বা অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষের সাথে সুউচ্চ মূল্যবোধ এবং উন্নত চারিত্রিক গুণাবলিসম্পন্ন আচরণের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। ঠিক তেমনিভাবে সব ধরনের অন্যায়, সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের নির্দেশনা দেয়। সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা কুরআন মাজিদের সরাসরি নির্দেশনা। আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আদেশ দিচ্ছেন; ‘তুমি মন্দকে প্রতিহত করো এমন পন্থায়, যা হবে উৎকৃষ্ট। ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা ছিল সে সহসাই হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ সুরা হা—মিম সাজদা: ৩৪]

বস্তুত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরো জীবনাচার ছিল কুরআন নির্দেশিত সেসব সুউচ্চ মূল্যবোধের উত্তম প্রয়োগ।

একটি বক্তব্যে জাহিলিয়্যাতের চিত্রায়ণ:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সমাজে চোখ মেলেছেন, বসবাস করেছেন সে সমাজে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড খুব স্বাভাবিক বিষয় ছিল। হিংস্রতা, লুটতরাজ এবং সন্ত্রাসী তাণ্ডবের সমস্যা সেখানে ভয়ঙ্কররূপে অবস্থান করছিল। এর চর্চার রূপ ছিল এমন, যেন তা হিংস্র ও অত্যাচারীদের অধিকার। সেই সমাজের সঠিক চিত্র পাওয়া যায় জাফর বিন আবু তালেব রা. বাদশা নাজ্জাশির নিকট কুরাইশ অমুসলিম সমাজের ব্যাপারে যে বিবরণ প্রদান করেছেন তার মাঝে। তিনি বলেছিলেন,
‘হে বাদশা, আমরা ছিলাম শিরকের ওপর অটল এক জাতি। মূর্তিদের ইবাদত করতাম। মৃত জীবজন্তু ভক্ষণ করতাম।
প্রতিবেশীর সাথে খারাপ আচরণ করতাম। অন্যায় রক্তপাতসহ অন্যের প্রতি যত ধরনের অন্যায় করা যায়, সবই ছিল আমাদের নিকট বৈধ। হালাল হারাম বলতে আমাদের কাছে কোনো বিষয় ছিল না।’ (আসসিরাতুন নাবাবিয়্যা: ইবনে হিশাম: ১/৩৩৫)

এছাড়া যদি সেই সমাজে মেয়েদের জীবন্ত কবর দেওয়ার প্রবণতার দিকে লক্ষ করি, তবে এটিকে তৎকালীন আরবসমাজের হিংস্রতা সংক্রান্ত সমস্যার গুরুতরতার ব্যাপারে প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। তাই এ সমস্যা সমাধানে রাসুলুল্লাহ  বলেন।

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তিনটা জিনিস হারাম করেছেন এবং তিনটা জিনিস সম্পর্কে নিষেধ করেছেন। হারাম করেছেন পিতামাতার অবাধ্য হওয়া, মেয়েদের জীবন্ত কবর দেওয়া…।(সহিহ বুখারি—৮৪৪)

সন্ত্রাস নির্মূলে বিস্ময়কর নববি সমাধান:
প্রথম ধাপ;
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে রাসুলুল্লাহ তাঁর বিস্ময়কর নববি সমাধান এনেছেন। সমাজে যে সমাধান প্রয়োগ করা হয়েছে প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও দয়া—ভালোবাসার মিশেলে পরিপূর্ণ ইসলামি আদর্শের আলোকে। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে তাঁর সাহাবিদের অন্তরে আল্লাহ তাআলার সার্বক্ষণিক দর্শনের চিন্তা প্রবেশ করিয়েছেন। এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তাআলা এবং বান্দার অধিকারগুলো আদায় করার ব্যাপারে যত্নবান হয়ে ওঠে। ফলে সে আর সহিংসতা প্রদর্শন করে না। সন্ত্রাসে লিপ্ত হয় না। কারণ, সে জানে আল্লাহ তাআলা তাকে সর্বক্ষণ দেখছেন। তার সকল গোপন বিষয়ও তিনি জানেন। হজরত মুআজ রা. থেকে বর্ণনা রয়েছে। তিনি একবার রাসুলুল্লাহ  কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। তখন রাসুলুল্লাহ আমাকে বললেন, ‘তুমি এমনভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করো, যেন তুমি তাঁকে সরাসরি দেখছ।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৬১৫৬)

দ্বিতীয় ধাপ;
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সহিংসতা নির্মূলে দ্বিতীয় ধাপে সমাজের কাঠামোর প্রতি নজর দেন। বস্তুত একটি সমাজ সুসংহত হওয়ার জন্য বেশ কিছু মূল্যবোধ নির্ধারণ ও তার চর্চা জরুরি।

সমাজ বিনির্মাণে কোমলতা ও সহানুভূতি:
সমাজের প্রতিটি সদস্যের মাঝে কোমলতা, সহানুভূতি ও ন্যায়পরায়ণতার উন্মেষ ঘটানো। সকলেই সকলের প্রতি সহানুভূতি ও ন্যায়পূর্ণ আচরণ করবে। কোনো জাতি ধর্ম বা বংশের কারণে কারও প্রতি কোনো পার্থক্য করা হবে না। যেমন রাসুলুল্লাহ  বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কোমল, দয়ালু। তিনি কোমলতা পছন্দ করেন। তিনি কোমলতার কারণে যা দান করেন কঠোরতা বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে তা দান করেন না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৯৩)

কোমলতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি:
রাসুলুল্লাহ এর পুরো জীবনচরিতে কোমলতা ও বিনম্র আচরণের বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে। তাঁর জীবনে কোমল আচরণের অনেক দৃষ্টান্তের কথা সিরাতের পাতায় অমলিন হয়ে আছে । একটি দৃষ্টান্ত দেখুন;
হজরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, একবার একদল ইহুদি রাসুলুল্লাহ  এর দরবারে প্রবেশ করল। এরপর (প্রবেশের সময়) তারা বলল, “السَّامُ عَلَيْكُمْ (তোমার মৃত্যু হোক)।’ তাদের কথাগুলো আমি বুঝতে পারলাম। তখন আমি বললাম, ‘বরং তোমাদের ওপরই মৃত্যু ও লানত বর্ষিত হোক। তখন রাসুলুল্লাহ  আমাকে বললেন, শান্ত হও আয়েশা, নিশ্চয় আল্লাহ কোমল। তিনি সকল কাজে কোমলতা পছন্দ করেন।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘হে আয়েশা, তুমি কঠোরতা ও মন্দালাপ থেকে বিরত থাকো।’ আয়েশা রা. বলেন, তখন আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি শোনেননি তারা কী বলেছে?
নবিজি  বললেন, ‘তাদের উত্তরে আমি বলেছি, এবং তোমাদের উপরও। (সহিহ বুখারি: ৬০২৪)

অন্যায়কারীর সাথে অবস্থাভেদে দয়াদ্রর্ আচরণ:
সমাজের অন্যায়কারীদের একটা পর্যায় দয়াদ্রর্ মনোভাব রাখা উচিত। কারণ, অনেক সময় সামান্য একটু দয়া ও সহমর্মিতার আচরণও বহু সহিংসতা ও উগ্রতাকে অপসারিত করে দেয়, পরস্পরের মাঝে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে। আমরা রাসুলুল্লাহ  জীবনের দিকে লক্ষ করলে তাঁর নিকট এই মূল্যবোধের মহত্ত্ব বুঝতে সক্ষম হব। একটি গল্প শুনুন;
হজরত আনাস রা. বলেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ  এর সঙ্গে মসজিদে বসে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ এক বেদুইন এসে মসজিদের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্র¯্রাব করতে লাগল। তা দেখে রাসুলের সাহাবিগণ ‘থামো… থামো… বলে তাকে ধমকাতে লাগলেন।।
আনাস রা. বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, ‘তোমরা এ অবস্থায় তাকে বাধা দিও না; এখন তাকে তার অবস্থায় ছেড়ে দাও।’ সাহাবিরা বিরত রইলেন। বেদুইন লোকটি প্রস্রাব সেরে নিল। তখন রাসুলুল্লাহ  তাকে কাছে ডেকে খুব শান্তভাবে কোমলকন্ঠে বললেন, ‘দেখো, এটা হলো মসজিদ। এখানে প্রস্রাব করা কিংবা ময়লা—আবর্জনা ফেলা উচিত নয়। বরং এটা হলো আল্লাহর জিকির, নামাজ আদায় এবং কুরআন পাঠ করার স্থান।’

এরপর রাসুলুল্লাহ একজনকে পানি আনতে আদেশ করলেন। সে এক বালতি পানি নিয়ে এলো এবং সেই পানি প্রাবের ওপর ঢেলে দিলো।(সহিহ বুখারি: ২১৯)

মধ্যমপন্থা ও ভারসাম্য বজায় রাখা:
সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে কার্যকরী একটি উপায় হচ্ছে মধ্যমপন্থা ও ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ধর্মের বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করা। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘নিশ্চয় দ্বীন হচ্ছে সহজ বিষয়। দ্বীন নিয়ে যে বাড়াবাড়ি করে, দ্বীন তার ওপর জয়ী হয় (অর্থাৎ দ্বীন পালনে সে অক্ষম হয়ে যায়)। কাজেই তোমরা মধ্যমপন্থায় আমল করো, (আমল করার ব্যাপারে) সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং সকালে, দুপুরে ও রাতের কিছু অংশে (ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট) সাহায্য চাও। (সহিহ বুখারি: ৩৯)

সুতরাং দ্বীন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি এমন একটা বিষয়, যা সহিংসতার দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে জোরপূর্বক নিজের মতামত গ্রহণে বাধ্য করা হয়।

শান্তিকামী মানসিকতা তৈরি:
চতুর্থ বিষয় হলো, সমাজের সকল সদস্যের মাঝে শান্তিকামী হওয়ার মানসিকতা তৈরি। এটি এমন এক মূল্যবোধ, যার দ্বারা গুণান্বিত মানুষকে রাসুলুল্লাহ তাঁর প্রতিপালকের নিকট এবং সমাজের মাঝে শ্রেষ্ঠ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এমনকি এই শান্তিকামী মনোভাবের সুদূর বিস্তৃত সীমাও তিনি আমাদের নিকট বিবৃত করেছেন।
হজরত জাবের রা. বলেন, একবার এক লোক রাসুলুল্লাহ  এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কোন মুসলমান শ্রেষ্ঠ?’
উত্তরে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
যে মুসলমানের জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকে, সে মুসলমানই শ্রেষ্ঠ। (৩৫৬)

সহিংসতা নির্মূলে আরও নববি কর্মপন্থা:
রাসুলুল্লাহ সমাজের সহিংসতা ও উগ্রতার সমস্যা সমাধানের জন্য শুধু এই সামাজিক মূল্যবোধের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকেননি। বরং তিনি এমন কিছু আদেশ—নিষেধও প্রদান করেছেন, যেগুলো সমাজের সহিংসতা বন্ধ করে দয়া, মমতা ও সম্প্রীতির প্রাণশক্তিকে জাগিয়ে তোলে। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে নারীদের সাথে কঠোরতা করতে নিষেধ করেছেন। হজরত ইয়াস ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে একটি হাদিস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
‘তোমরা আল্লাহ তাআলার বাদিদের আঘাত করবে না।’ এরপর একবার উমর রা. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন, ‘মহিলারা তাদের স্বামীদের অবাধ্য হচ্ছে।’
এই কথার প্রেক্ষিতে নবিজি তাদেরকে আঘাত করার অনুমতি প্রদান করলেন। তবে এরপর অনেক মহিলা রাসুলুল্লাহ  এর স্ত্রীদের নিকট এসে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে (আঘাতের) অভিযোগ আরোপ করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট অনেক মহিলা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে এসেছে। মূলত যারা স্ত্রীদেরকে প্রহার করে, তারা উত্তম লোক নয়। (সুনানে আবু দাউদ: ২১৪৬)

অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরা:
সমাজ থেকে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে একটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরা। যাতে মানুষের অন্তরে অপরাধের প্রতি ঘৃণাবোধ তৈরি হয়।
নবিজি  কার্যকরী এই কর্মপন্থা গ্রহণ করেছিলেন।

আবুল হাকাম আল—বাজালী রহ. থেকে বর্ণিত, আমি আবু সাঈদ খুদরি ও আবু হুরাইরা রা.—কে বর্ণনা করতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ  বলেছেন, আসমান—জমিনের মধ্যে বসবাসকারী সকলে একত্রে মিলিত হয়েও যদি একজন মুমিনকে মেরে ফেলার কাজে শরিক থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (জামে’ তিরমিজি— ১৩৯৮)

রাসুলুল্লাহ  নির্বিঘ্ন মানুষদের আতঙ্কিত করতেও নিষেধ করেছেন। পাশাপাশি যেসব উপায়ে মানুষকে ভীতিপ্রদর্শন ও আতঙ্কিত করা হয়, তার সকল উপায়—উপকরণ ও মাধ্যমও বন্ধ করে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রতি লৌহ নির্মিত (অস্ত্র) দ্বারা ইঙ্গিত করে, তাহলে সে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তাকে অভিসম্পাত করতে থাকে; যদিও সে তার আপন ভাই হয়। (সহিহ মুসলিম ২৬১৬)

উগ্রদের রুখতে দণ্ডবিধির যথার্থ ব্যবহার:
কোমলতা ও সুন্দর আচরণে মাধ্যমে সমাজের একটা বড় থেকে অপরাধ প্রবণতা দূর করা গেলেও কিছু কিছু বিচ্যুত মানুষ সমাজে থাকবেই। তাদের প্রবৃত্তি তাদেরকে প্রলুব্ধ করে সমাজকে ভীত—সন্ত্রস্ত করতে এবং নিজেরা সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হতে। তাদের জন্যই প্রয়োজন হয় শরিয়তের এমন সব আইন ও দণ্ডবিধানের, যেগুলো তাদের এসব অন্যায়—অপরাধ থেকে বিরত রাখতে পারে। শরিয়তের এমন কিছু দৃষ্টান্ত হলো, কিসাস, বিদ্রোহ, ডাকাতি ইত্যাদির দণ্ডবিধান।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এটাই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত—পা কেটে দেওয়া হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে দূর করে দেওয়া হবে। এটা তো তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা। আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে বিরাট শাস্তি। (সুরা মায়িদা: ৩৩)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সকল দণ্ড বাস্তবায়নে দৃঢ়সংকল্প ছিলেন। কেননা এর মাঝে গোটা সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে ছিল। তাই সমাজ থেকে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে নবিজি  এর কর্মপন্থা অনুসরণের বিকল্প নেই।

শিক্ষক, গবেষক ও আলোচক

শেয়ার করুন
উসমান বিন আবদুল আলিম একজন উদীয়মান ইসলামি চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক। তরুণ বয়সেই তিনি ইসলামের বিভিন্ন শাখায় জ্ঞানার্জন ও গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। কুরআন, হাদীস, ইসলামি দর্শন ও ইতিহাসের ওপর তাঁর গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং চিন্তাশীল লেখনিতে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইসলামি মূল্যবোধ ও আধুনিক চিন্তার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একটি সময়োপযোগী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছেন, যা বর্তমান প্রজন্মকে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য বুঝতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, তিনি নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লেখালেখি করছেন — যেখানে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, আত্মউন্নয়ন এবং সমাজ সংস্কারের বিষয়ে তার বিশ্লেষণ প্রশংসিত হচ্ছে।
মন্তব্য নেই

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।